Thursday, December 29, 2011

চম্পাতলী নামকরণের অন্তরালে

মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী 
----------------------------- 

চম্পাতলী - বাংলাদেশস্থ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানা / উপজিলার অন্তর্গত লেলাং ইউনিয়নের অধীন শাহনগর গ্রামের একটি স্থানের নাম । যার বুক চিড়ে চলে গেছে তিন দিকে তিনটি রাস্তা । যেখানে রয়েছে একটা যাত্রীবাহী গাড়ী সমুহের জন্য একটা স্টপেজ বা নির্ধারিত স্থান । গহিরা - হেয়াকো সড়কের অনেকগুলো গাড়ী স্টপেজের মধ্যে অন্যতম একটা স্টপেজ এই চম্পাতলী ।
এ স্থান থেকে একটা রাস্তা উত্তর দিকে উপজিলা সদর ও পৌরসভা হয়ে চলে গেছে কাজির হাট , নারায়ণ হাটের উপর দিয়ে হেয়াকো হয়ে মিলিত হয়েছে রামগড় - ফেনী রোডে । আর একটা রাস্তা দক্ষিণমুখী হয়ে চলে গেছে নানুপুর , আজাদী বাজার , মুহাম্মদ তকির হাট হয়ে রাউজানের গহিরা গিয়ে মিলিত হয়েছে রাউজান - হাটহাজারী রোডে । অপর রাস্তাটি পূর্বদিক হয়ে ত্রিমুখী সংযোগ রক্ষা করে চলে গেছে উত্তর দিকে টার্ণ নিয়ে সন্যাসীর হাটের উপর দিয়ে ফেনুয়া কর্ণফুলি চা বাগান হয়ে মিলিত হয়েছে খাগড়াছড়ি - রাঙ্গামাটি রোডে এবং বিপরিত মুখী হয়ে আর একটা রাস্তা চলে গেছে শাহনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় , শাহনগর কিন্ডারগার্টেন ও শাহনগর বহুমুখী উচ্ছ বিদ্যালয়ের বুক চিড়ে ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে একটা রোড দক্ষিণ দিকে গিয়ে মিলিত হয়েছে হেয়াকো-গহিরা রোডে এবং আরকটি রোড পুর্ব দিকে গিয়ে প্রবেশ করেছে গোপালঘাটা গ্রামে ।
শাহনগর গ্রামে চম্পাতলী নামে ১৭ই মার্চ ১৯৯৯ ইং পূর্বে কোন স্থান ছিলনা । একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে এ স্থানটি বিগত ১৭ই মার্চ ১৯৯৯ ইং মানুষের অসভ্য আচরণের জবাব দিতে স্বগৌরবে আত্মপ্রকাশ করে । পূর্বে এ স্থানটিকে মানুষ তাচ্ছিল্যের সহিত " পোতানার ঘাটা " নামে অভিহীত করতো । যদিও পোতন বা মোহাম্মদ পোতন নামের এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তির নামে এ স্থানটি পরিচিত ছিল , কিন্ত অসভ্য মানুষগুলো সেই মহৎপ্রাণ মানুষটির পোতন নামটি বিকৃত করে অত্যান্ত তাচ্ছিল্যের সহিত " কন্ডমের ( ফোতানা )উপাধি দিয়ে ব্যঙ্গ করে এই স্থানের মুল নামটি না বলে বলতো ফোতানার ঘাটা । মোহাম্মদ পোতন ছিলেন আমাদের বংশধারার উর্দধতন পঞ্চম পুরুষ । যিনি ছিলেন এলাকার একজন প্রভাবশালী ধার্মিক জনহিতৈষী মানুষ । চম্পাতলীর পশ্চিম পার্শ লাগোয়া বাড়িটিই তাঁর বংশধরদের বর্তমান অবস্থান । ২৩ টি ঘর সমৃদ্ধ বৃহৎ এ বাড়িটিই মোহাম্মদ পোতনের নামানুষারে পোতন গাজীর বাড়ি নামে অভিহীত । আর এ বাড়ির সম্মুখেই এ স্থানের অবস্থান এবং মোহাম্মদ পোতনের প্রসিদ্ধ ডাক নাম ও সর্বত্র তার পরিচিতি ছিল বিধায় এ স্থানটি তাঁর নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল ।
কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের পর এ স্থানের মুল নামটি আস্তে আস্তে বিকৃত রূপ ধারণ করতে থাকে । পরে এমন অবস্থায় উপনিত হয় যে , মোহাম্মদ পোতনের বর্তমান বংশধরদের কানে এই স্থানটির বিকৃত নাম শুনলে গায়ে শুল দেয়ার মতো যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকে । তা থেকে আমি ও রেহায় পাইনি । কারণ আমিও মোহাম্মদ পোতনের বংশধর ।
পোতনের একজন বংশধর হয়ে তাঁর নামের এই ধরণের বিকৃতি , এই ধরণের ব্যঙ্গত্বতা আমার সহ্য হচ্ছিলোনা । খুঁজতে লাগলাম এ থেকে পরিত্রাণের উপায় । অবশেষে একদিন সেই সুবর্ণ সুযোগ এসে গেলো । ঘোষণা হলো - আজাদি বাজার থেকে থানা সদর পর্যন্ত আমাদের সম্মুখ দিয়ে পাবলিকদের পরিবহনকারী জীপ সার্ভিস চালু হচ্ছে । আমি খুশিতে আত্মহারা । এই সুযোগ হারানো চলবেনা । তখন আমি একটা অটো রাইসমিল দিয়ে গ্রামেই অবস্থান করছি । রাস্তার উপর দোকান বিধায় সবকিছু আমার নাগালে । ২০ দিন পূর্বেই শিওর হলাম ১৭ই মার্চ আমার স্বপ্ন পুরনের দিন । জীপ সার্ভিস চালু হচ্ছে ১৭ তারিখ ৩৭৫ টাকা দিয়ে ছোট ছোট তিনটা সাইনবোর্ড বানিয়ে এনে ৫ দিন পূর্বেই রেখে দিলাম । অবশেষে এসে গেল সেই তারিখ । সকাল সাড়ে আটটায় জীপ আসবে আমার সামনেই । তাই ভোর ৬টায় উটে ত্রিমুখী স্থানে দাড়িয়ে থাকা গাছটিতে সাইনবোর্ডগুলো লাগিয়ে দিলাম । জীপ আসার অপেক্ষায় বসে থাকলাম । ঠিক সাড়ে আটটায় জীপ যখন আসল দাঁড় করালাম । ড্রাইভার ও হেলপারকে ৩০০ টাকায় কনটাক্ট করলাম সাইনবোর্ড দেখিয়ে , যাতে তারা এখানে বিরতি দেয় ২ মিনিট এবং চম্পাতলি স্টপেজ হিসাবে এ স্থানটি পরিচয় করায় । এভাবে ৮টি জীপের চালক ও হেলপারকে সর্বমোট সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে ফোতানার ঘাটাকে পরিবর্তন করে পরিচিতি করালাম চম্পাতলী নামে ।
যখন নামটি লোকের মুখে রটতে থাকলো আর একটা পদ্ধতি গ্রহণ করলাম - ত্রিমুখী রাস্তার মোড়টিতে ১১টি চম্পা ফুলের গাছ রোপন করলাম , যাতে স্থানটির নাম আরও ফুটে উঠে । এভাবে ফোতানার ঘাটা আজ চম্পাতলীতে পরিণত হয়ে গেলো । আর চম্পাতলী নামকরণকারী লোকটি হয়ে গেলো সকলের চক্ষুশুল ।
আজ এই লেখা প্রকাশকালে সেইসব মানুষগুলোকে স্মরণ করছি । যারা তখন ছিল ছোট । অথচ তারা আমার এই বৃহৎ কাজের সহযোদ্ধা হয়ে সর্বোত ভাবে সহযোগীতা করে আমার কাজকে সহজ করে দিয়েছিল ।
হে , বন্ধুরা !
আমি তোমাদের ভুলিনি আজও ,
ভুলবনা কোনদিন ,
রয়ে যাবে অমর তোমরা ,
চম্পাতলী থাকবে যতদিন ।
=======================